শিয়ালকাঁটাঃ একটি কাঁটাযুক্ত পপি জাতীয় গাছ

Related Articles

বৈজ্ঞানিক নামঃ Argemone mexicana L.

গোত্রঃ  Papaveraceae 

 Argemone শব্দটি প্রাচীন গ্রিক ভাষার আর্জিমা (“ছানি” বা “ক্যাটারাক্ট”) থেকে এসেছে। এই গাছের রস চক্ষুরোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হত বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে আর্জিমোন, এবং মেক্সিকোয় পাওয়া যায় বলে মেক্সিকানা। এটি একাধারে বিষাক্ত আগাছা এবং ঔষধি গুল্ম।

অন্যান্য নাম- স্বর্ণক্ষীরা, স্বর্ণদুগ্ধা, রুক্সিণী, সুবর্ণা, হেমদুন্ধী, কাঞ্চনী, Mexican prickly poppy ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

শিয়ালকাঁটা আমাদের দেশে এসেছে সুদূর মেক্সিকো থেকে। প্রচলিত আছে যে, ষোড়শ শতকে স্প্যানিশ বাণিজ্যিক জাহাজে আলুর বস্তা ও মাটির সঙ্গে এই গাছের ছোট ছোট বীজ চলে এসেছিল আমাদের দেশে। তারপর থেকে এদের আবাস বন-জঙ্গল, ক্ষেত-খামার, রাস্তার পাশে, বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড়।

বর্ষজীবী অতিকায় বীরূৎ, হলুদ রস সম্বলিত, কান্ড বিক্ষিপ্তভাবে কণ্টকিত। পাতা অৃবন্তক, কান্ডবেষ্টক, ৭.৫-১৮.০ সেমি লম্বা, তরঙ্গিত পক্ষবৎ খন্ডিত, সাদা শিরাবিশিষ্ট। পুষ্প একক, প্রধান কান্ড বা খর্বাকার পত্রময় শাখায় প্রান্তীয়, উজ্জ্বল হলুদ। বৃত্যংশ ৩টি, শীর্ষ শিংযুক্ত, কণ্টকিত। পাপড়ি ৬টি, বিস্তৃত বিডিম্বাকার। পুংকেশর অনেক। গর্ভাশয় কণ্টকিত, এক প্রকোষ্ঠী, ডিম্বক অসংখ্য, গর্ভদ- খাটো, গর্ভমু- অবৃন্তক, ৪-৬ খন্ডিত, গাঢ় লাল। ক্যাপসিউল আয়তাকার-ডিম্বাকার, ২.৫-৩.৮ সেমি লম্বা, বিক্ষিপ্তভাবে হলুদ কণ্টকিত, শীর্ষ থেকে ৪-৬টি কপাটিকায় বিদারিত হয়। বীজ অসংখ্য, গোলক আকার, জালিকাময়, বাদামী-কালো।

starr-080415-4033-Argemone_mexicana-flowers_and_leaves-Makawao-Maui
শিয়ালকাঁটা


ফুল ও ফল ধারণ: ফেব্রুয়ারি-জুন।
আবাসস্থল: পতিত জমি এবং রাস্তার ধার।
বিস্তৃতি: চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটি।
বর্তমান অবস্থা: মাঝে-মধ্যে পাওয়া যায়।

ব্যবহার:

কুষ্ঠরোগে:

শেয়ালকাঁটা গাছের রস ৫ গ্রাম পরিমাণ নিয়ে তার সাথে সমপরিমাণ গরুর কাঁচা দুধ মিশিয়ে ব্যবহার করলে কুষ্ঠ সারে, তবে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করা দরকার।

রক্ত আমাশয়ে:

পাকা বীজের তেল রোগীর বয়স অনুপাতে ৩০ থেকে ৬০ ফোঁটা সকালে একবার এবং সন্ধ্যায় একবার করে খাওয়ালে রক্ত আমাশয় অবশ্যই ভালো হয়ে যাবে। আধুনিক এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসুকরাও এ অভিমত দিয়েছেন।

পাণ্ডু অর্থাৎ জণ্ডিস হলে:

গাছের মূল কাণ্ড চিড়লে যে হলুদ রং-এর রস বের হয়, সেটা সকালে এক চামচ এবং বিকেলে একই পরিমাণ সাতদিন রোগীকে খাওয়ালে উপকার হবে।

গণোরিয়া:

শেয়ালকাটা গাছের রস এক চামচ এবং চন্দন গাছের রস সমপরিমাণে মিশিয়ে ঘায়ে লাগাতে হবে। তবে ওষুধ প্রয়োগ নিয়মিত একমাস ধরে করা দরকার।

পাঁচড়া ও চুলকানি হলে:

শেয়ালকাঁটা বীজের তেল ১০ গ্রাম এবং ২০ গ্রাম খাঁটি সরিষার তেল মিশিয়ে সামান্য গরম করে গোসল করার পর মাখতে হবে। তিন থেকে ‘ চার দিন ব্যবহার করলে নিশ্চিত আরোগ্য লাভ হয়।

সতর্কতাঃ

ব্যথা, অসুস্থতা বা রোগের ক্ষেত্রে সর্বদা অনুমোদিত মেডিকেল পেশাদার বা স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করুন।

তথ্যসূত্র:

১. কবিরাজ বৈদ্যনাথ সেন, সম্পাদনায় কবিরাজ আ: খালেক মোল্লা লোকমান হেকিমের কবিরাজী চিকিৎসা, সর্বস্বত্ব, ঢাকা

More on this topic

Comments

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Advertisment

Popular stories

মাছরাঙা পাখি বদলে দিলো বুলেট ট্রেনের নকশা

৩০ বছর আগে জাপানের বিখ্যাত বুলেট ট্রেনের একটা ত্রুটি ছিল। টানেলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় বিকট এক ধরনের শব্দ করতো এটি। বন্যপ্রাণি,...

সবুজ হাঁড়িচাঁচা: অপরূপ সুন্দর এক পাখি।

দৃষ্টিনন্দন চেহারা। বোধ করি প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ হবেন যে কেউ-ই। দেশের আবাসিক পাখি হলেও সর্বত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই সবুজ হাঁড়িচাঁচার। দেখা...

পাতি মাছরাঙাঃ ধৈর্যশীল পাখি

গ্রীক পুরাণে আছে, একবার রাজা সমুদ্র যাত্রায় গিয়ে জাহাজ ডুবে মারা গেল। এ খবর রাণী যখন পেল তখন তিনি সহ্য করতে পারলেন...

জল মোরগ: জলে যার বিচরণ

মোরগ আপনারা নিশ্চয় চেনেন। বন মোরগের কথাও জানেন নিশ্চয়। হয়তো দেখেছেনও অনেকে। আজ আমরা শোনাবো জল মোরগের কথা। স্থানীয়...

ঘৃতকুমারীঃপ্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর যত গুণ

প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর গুনের কোনো সীমা পরিসীমা নেই। রাস্তাঘাটে কিংবা বাজারে খুবই সহজলভ্য এটি। রস হিসেবে খাওয়া যায়...